(পরিচালক বাক্)
Friday, January 15, 2016
সো কলড লিটিল ম্যাগাজিনের যে
সো কলড সম্পাদক খবরের কাগজে তাঁর সো কলড পত্রিকার রিভিউ বেরোলে বাড়ির কাউকে খবরের
কাগজটা পড়তে না দিয়ে আগে সেটা কেটে ফেসবুকে সেঁটে দ্যান, তিনি আর কিছু নয়, লিটিল
ম্যাগাজিনের পরিচয়কে ঘেঁটে দ্যান, এবং সংগ্রামী সম্পাদকদের ঘাম-রক্ত-অশ্রুকে
অপমানিত করেন। এটা দাস মনোবৃত্তি।
২০১৬-র কবি প্রতিষ্ঠানমুখী বা প্রতিষ্ঠানবিরোধী- এই দুই অশিক্ষিত ধারণার
কোনোটাতেই থাকবেন কেন? তিনি তো স্বপ্রতিষ্ঠ হবেন! জীবনানন্দের আমলে জীবনানন্দ
সভাঘর থাকলে উনি সেখানে বছরে দু-একবারের বেশি কবিতা পড়ার চান্স পেতেন না।
বাংলা কবিতা তো একটা
ছোট্ট পাঁউরুটি! তাকে ঘিরে অ্যাত ঘেউ ঘেউ! বেচারা যায় কোথায়! লোকে তাকে খায় কোথায়!
কিছু পত্রিকা আছে,
সেগুলোয় লেখার চেয়ে না-লেখা সম্মানজনক। সেটা একটা স্টেটমেন্ট। যারা কবিতা
লিখে কল্কে পেতে চান, তাঁদের জন্য এই কথাটা নয়। আবার, অ্যামনও লোক এখনও আছে,
মনিটরটাকেই কম্পিউটার ভাবে। অ্যামনও লোক এখনও আছে, কবিতার বইয়ের বিজ্ঞাপন ‘দেশ’-এ
দিয়ে সেই ছবি আবার ফেসবুকে আপলোড করে। আমরা তাদের জন্যও প্রেম রেখেছি।
যারা বলেন, ‘এসব কবিতা ক-দিন টিকবে কে
জানে! এসব থাকার জন্য লেখা হচ্ছে না...’ তাঁরা একটা ব্যাপার খেয়াল করেন না, তাঁরা
নিজেরাই সম্ভবত আর টিকে নেই। পৃথিবীতে আছেন বটে, তবে ডাক্তার যতদিন রাখতে পারবেন
ততদিনই।
গুপী গাইন বাঘা বাইন
সিনেমায় সেই যে গুপী একটা তানপুরা কাঁধে গ্রামে ফিরছে, আর তার সঙ্গে দ্যাখা হল
গ্রামের মোড়লদের- তারা জিজ্ঞাসা করল ‘মূল্য কত নিল?’ গুপী জানাল মূল্য লাগেনি। তখন
শুনল- ‘এমনি এমনি দিয়ে দিল!’ এখন যে কবিরাই আসন্ন বইমেলার
জন্য জমকালো বইয়ের মলাট পোস্ট করছেন, আমার ঠিক অমনি করে তাঁদের জিজ্ঞাসা করতে
ইচ্ছে করে- মূল্য কত নিল? খাটের তলায় সব কপি রাখার জায়গা আছে তো?
একমাত্র কবিতারই কোনো
দোকান হয়না। কবিতা বেচতে হলে জাহাজ চাই, সমুদ্রে ভেসে পড়া চাই।
অনুপম মুখোপাধ্যায়
(পরিচালক বাক্)
(পরিচালক বাক্)
এক দুই
যারা
দূরে সরে যায়
তাদের দিকে আমার অপছন্দ।
হাওয়াকে
বলি, তুমি দূরে সরে যাও কেন?
দূরে যাওয়া ভালো নয়।
নদীর
জলকে বলি তুমি দূরে চলে যাচ্ছ কেন?
দূরে যাওয়া ভালো নয়।
ফুলগাছকে
ছেড়ে ভেসে যাচ্ছে, পথিক
এক দেশ থেকে অন্য দেশে।
আমি
একটা বড় থাকার কথা ভাবি
যা কোনোদিন ফুরোয় না।
সকালবেলা
উঠে দেখি পাহাড়টা ঠিক জানলার সামনে,
স্থলপদ্ম ঠিক আগের মতো
আর
সেই মৌমাছিগুলো তারা ভরসকালেই এসে হাজির।
কত
বড় একটা ধ্বনি বেজে ওঠে না! এক দুই তারপর
তিন চার।
বীক্ষণ
দিন
দর্শনায় হোক
একটা
বাড়ির সঙ্গে অন্য বাড়ির
ব্যবধান
একটা
বৃক্ষের পাশে দ্বিতীয় বৃক্ষ
দ্বিতীয়তা
স্পর্শময় উপস্থাপন
তা
বীক্ষণ চায়।
সেই
বীক্ষণ যা বস্তুর সঙ্গে বিভেদ ঘটিয়ে
তাৎপর্য
হয়।
সেই
অতলান্ত আবহাওয়া
যা
সব
বাড়ির সঙ্গে নিজের উপস্থিতির
মাপজোখ
করে।
বসন্তের
সঙ্গে গৃহ প্রত্যাবর্তনের।
ছায়া
রোদ্দুরের বাড়ি।
বীতধর্ম
বাড়ে।
খাঁ
খাঁ নিমগ্ন।
উৎসবের
প্রকারান্তর।
*** ২০১৬ সাহিত্য আকাদেমি পেলেন কবি আলোক
সরকার তার কাব্যগ্রন্থ ‘শোনো জবাফুল’ এর জন্য। বাক্ এর পরিচালক কবি অনুপম মুখোপাধ্যায় টেলিফোনে কবিতাটা
নিয়েছিল। আলোক সরকার বলেছিলেন ওটা তাঁর সেই মুহূর্তের সবচেয়ে প্রিয় কবিতা। 'বাক'-কে দিচ্ছেন।
বাক্ দেওয়া কবির কবিতাটি পড়তে ক্লিক করুনঃ শোনো জবাফুল – আলোক সরকার
পাখিদের পাখিরা
১
উড়ছে
হাসি
নেভাতে চেও না
এই বৃষ্টি সেই মেঘ
পুরনো হয় না
উড়ছে
কান্না
মাপতে চেও না
পাখিদের কুয়াশা হয়
শীতকাল শোনা যায় না
২
পাখি
আশ্চর্য একটি মেয়ে
পুরনো একটা ডিসটেম্পার লিখতে লিখতে
রঙহীন হয়ে যাচ্ছে
এমনকি
তার জেন্ডারটিও
প্রায় ফেরারি
৩
পাখিদের সান
পাখিরাই সানশাইন
ভর সন্ধে
রাত যত বেশি
পাখিদের রোদ গ্লো করে
টুনিবাল্বের নাচ শুরু
একটু পরে
৪
পাখিগাছের যে ফল
তার রিদমটি আসলে ব্রিজ
ব্রিজটি ভীষণ মৌসুমি
আমি তাকে চেয়েছিলাম
জানোই তো
আমার ভেতরে জলের খুব অভাব
ব্রিজটির কাছে
একটি ফলন্ত নদী চেয়েছিলাম
৫
দুটি ভিন্ন প্রজাতির পাখি
আমাদের ছাপোষা বিবাহটিকে
বিয়ে করছে
শুধরে নিচ্ছে
আমাদের ভুল
৬
ছলছল
কলকল
এই শব্দটুকুই
পাখিকে
মানুষ হওয়া থেকে বাঁচায়
৭
পাখির রূপ বেশি হলে
রাজকন্যা সে
গায়ে কড়িয়াল
চওড়া চক্রবাল
রুনুঝুনু পায়েল
পৃথিবী পালকিওয়ালা
দুলকিচালের চাঁদ
উধাও পাখিসমাজের
রাজধানী
৮
পাখি হোক
তুমুল পাখি হোক আগে
তারপর না হয়
পরিচয় হবে
আলাপ থেকে গড়াবে বন্ধুতা
বন্ধুতা থেকে প্রেম
পাখিদের আশে পাশে থাকা
সবার জন্যেই একদিন
বাধ্যতামূলক হবে
৯
জলে থাকে মাছ সাঁতার চেনে না
গাছে থাকে আকাশ সবুজ চেনে না
নিরো থাকে বেহালায় ছড় চেনে না
আমার দারুণ লাগে
যখন কেউ কাউকে চেনে না
আমিও আমাকে
পাখিও আমাকে
আমিও পাখিকে
১০
হ্যাঁ ভিজবো
পাখির সাথে পাল্লা দিয়ে
তার পর
ভারি বৃষ্টি
হাল্কা নোটেশন
মেঘের জাহানারা
১১
দুটি পাখি দিয়ে তৈরি একটি ঘর
ঘরটি বিন্দাস
ঢুকে পড়লো মানুষের ভেতর
একটি ঘড়ি থেমে রইল
খাঁচার ভাড়াবাড়িতে
১২
পাখি নেই বলে আমি ফিরে যাচ্ছি
পাখি নেই বলে তুমি ফিরে আসছ
এই আসা এবং যাওয়ার মাঝখানে
কিছু পাখি অ্যাসিড অ্যাটাকে
ঝুলে আছে
১৩
দেবতারা সরে গেছে
আর ঈশ্বরবিদ মানুষ
পাথুরে নির্মাণ বাঁচাতে বাঁচাতে
মরে গেছে
এই মরে যাওয়া পাথরটি আসলে
পাখিদের তীর্থস্থান
১৪
যদি না পাখিদের মত কেউ আসে
পুড়িয়ে দ্যায় কিছু কাকতালীয়
ততদিনই
খড়ের কাঠামো
আমি আর আমাদের
নিকাহ প্রস্তাব
১৫
আমার প্রশ্ন একটাই
মানুষ কী করে পাখি থেকে বিচ্ছিন্ন হল
পাখির প্রশ্ন একটাই
বিচ্ছিন্নতাবাদী পাখিরা কী কোরে মানুষ
১৬
মানুষের চোখে
কোথাও না কোথাও পাখি
চোখের পালক জানে
কী কোরে
পলকের পা
ম্যাপের গা
মেপে
চলতে হয় সাবধানে
১৭
তোমার কবিতায় কোন পাখি নেই
সেই নয় দশকের পর
তুমি কোন পাখির ভেতরেই থাকোনি
পাখিরাই বরং
তোমাকে দেখে
লেখা করে
দাঁত নখ দিয়ে
শিশির খোঁটে
তোমার বেঁটে বেঁটে উপন্যাস খায়
১৮
তুমি আসছ না
কোনদিনই আসছ না
আমার শহরে
আমি আঁকছি
ঘাম মুছে দিচ্ছে একটা পাখি
ঘামটার টিস্যু টের পাচ্ছি না
১৯
পাখিরা নিচু থাকতে পারে না
মাথা তুলে বাঁচতে চায়
হে শিকারি
ট্রিগার চেপে ছুটে আসো
ডারউইনে ফিরছে
ফিরবেই পাখিরা
২০
সে তুমি যতই ডানা ঝাপটাও
রিভিউ
এক
পশলা জ্যোৎস্না রাত্রিকে বাজিয়ে তুলছে
আকাশ
গান হচ্ছে, চোখের নিচের খানিকটা টলমল
হাঁসের
ডানায় জলের মতো পরিবাহিত এবং অসহায়
৫৩টা
বর্ষাকাল নিয়ে বাবার ব্যর্থতা বাড়ি ফিরছে
তখনও
পার্শ্বডাঙ্গা পুকুরের কচুরিপানারা বামফ্রন্ট হয়নি
আর
আমার ইয়েটাও তখন ছোট
রাস্তায়
পা রাখার মতো একটাও গোধূলি নেই
কান্নাকাটি
বারণ, কিচিরমিচির বারণ, ছোট বড় অফার বারণ
রাগ-
দুঃখ- প্রতিক্রিয়া-পরিত্যাগ-অতিক্রম সব
কুয়াশা
ব্যথিত স্পর্ধা ,
জাঙ্গিয়া এবং হরমোন সামলাচ্ছি একা
ডেকে
ওঠা তত্ত্ব,
সন্দেহ প্রবণ আয়না, স্বার্থ ও সোমবার
ক্রমশ
রোগা এক শিল্পের সত্যিগুলি বাবাকে
যুগপৎ
আমাকে শ্রাবণ করেছিল
ধরা
যাক মেনশেভিক গন্ধে শান্ত দুপুর বিবৃত ও ফুটে উঠেছিল...
পরিবাহিত
অক্ষরেরা আমাকে ফুঁ দিয়েছিল, দুঃখ মেশানো
ব্যর্থতার
লাবণ্যে সেসব আন্তরিক পরাজয়
পুবদিকের
সাঁকোর ওপর কুয়াশার মতো এক কোণে
দরিদ্র
ম্লান সব অক্ষরেরা,
হিমলাগা , দীর্ঘ রোদের
হলুদ
মাখা, রাগ ঘৃণা টপকানো, সেইসব অক্ষর
অসুখের
বাঁদিকে আস্তে ঘুমিয়ে পড়া... সংশ্লিষ্ট আত্মার ভেতর
সেইসব
স্নায়ু খুলে রাখা বানান। হেমন্তের উদাসীন
সন্ধ্যার
ছেঁড়া খোঁড়া, গ্রামীণ নিমগাছের অভিধান
সেইসব
উর্দি পরা তরঙ্গ হয়তো তখনও পেয়েছিল দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ...
বিজলীপ্রভা
ধুলো শেখাতে চাইছিলাম ঢলঢলে ব্যাখ্যার স্মৃতি
আর
ভিন্ন বেদনা নড়াচড়া করতে করতে জ্যোৎস্না পড়েছিল
এক
হাজার বছরের সাদার ওপর পড়ামাত্রই চমকে উঠেছিল ধ্বনির ঈশ্বর
জল
ও আগুনের মাংস গাছে গাছে
কম
কথা নয় সেইসব সেমিকোলনের ইলেকট্রন...
নাতির
জন্য রূপকথা
সতর্কীকরণ
তোদের শরীরে কোনো ধ্যান নেই, শুধু এক বাঘের ক্ষিদেতে
ছিঁড়ে খুঁড়ে নিতে চাস আলো-ছায়া লোনা জল, বিনুনির ফিতে
তোদের শার্টের ক্রিজে বাড়ি নেই শুধু এক প্রপাত ঝাঁপায়
কিকরে ফেরাবি নাও বল শুনি, বানে যদি গাঙ ভেসে যায়
উস্কানি
এই, তুই বিবাহিত? যার মুখ ধরেছিলি মনে
ভালবেসে বলেছিলি তুঁহু বিনা বাঁচিব কেমনে
আমি কি পারিনা তার খোলা চুলে তিন সন্ধ্যা বেলায়
ভূত হয়ে মিশে যেতে, অথবা উইজিবোর্ড খেলায়
যদি সে আমাকে ডাকে, বলে
‘ওলো, মান্ধাতা সতীন
আয় তোর মাথা খাই’,
আমিও কি বোধবুদ্ধিহীন
ঈর্ষার সুযোগে তার আত্মা খাবো আরো কুরে কুরে
যেখানে লুকিয়ে তোকে সে রেখেছে তার অন্তঃপুরে?
এই তোর বিয়ে যদি, এত ভয়, এত অনিশ্চিতি
যে আসবে আমার পরে আমি হবো সেই আফ্রোদিতি
উপসংহার
মুঠোর বোতাম থেকে ঝরে যাচ্ছে শামুকের লাজুক খোলায় রাখা ভয়
ফেলে যাচ্ছি চারণের আদিগন্ত ক্ষেতিবাড়ি, নোনা জল, ঘন লোকালয়
যে দেশে চলেছি জানি পুরুষেরা সেই দেশে কটুভাষী, বোঝেনা আদর
সে পথে পুড়েছি যত ততই জেনেছি তার ভালবাসা কলহ মুখর
গাছে জল দেওয়ার পর
রুফটপ গার্ডেনে গাছে জল দেওয়ার
পর যে কবিতাটি বলা হবে সেই কবিতা থেকে ফুলের সৌরভ পাওয়া যাবে এটা আপনারা ধরে বসে
আছেন। কিন্তু ধরে বসে থাকা আর প্রকৃত ধরার মধ্যে একলক্ষ মাইলের দূরত্ব। গাছে জল
দেওয়ার পর সবথেকে আগে ফুটে উঠবে রং। জানা যাবে রক্তকরবীর লালের সঙ্গে বোগেনভিলিয়ার
তিনটে পার্থক্য। অ্যালামন্ডার হলুদ আর ইনকার হলুদের মধ্যে শেডের পার্থক্য অনেকটাই।
এখন এই পার্থক্য থেকেই খুঁজে নিতে হবে আমাদের ভালবাসাগুলিকে, আমাদের ঘৃণাগুলিকে,
আমাদের কান্নাগুলিকে।
ফুলের গন্ধগুলির জন্য পরবর্তী
এপিসোডের জন্য অপেক্ষা করুন।