Friday, January 15, 2016
প্রশ্ন
একটা প্রশ্ন -
কি ছবি আঁকবো ?
আঁকো না যা তোমার চারপাশে রয়েছে।
কি আছে ?
আছে প্রকৃতি, যা দেখা যায়, যেমন গাছ, বাড়ি, নদী, পুকুর, মানুষ, পশুপাখী,
ইট, পাথর,
আরো কতো কি ।
আছে রঙ, আছে শব্দ, আছে অনুভূতি, আছে আকার -
আবার আছে ছন্দ, আছে গতি, স্থবিরতা, আলো, অন্ধকার, উজ্জ্বলতা, আছে
আবছায়াও -
আছে নিজের অনুভূতি, নিজের বেদনা, আছে নিজের চাওয়া পাওয়া -
আছে তোমার চারপাশ, আছে সামাজিক পরিস্থিতি - ভৌগলিক অবস্থান -
তোমার নীতিবোধ - তোমার বিচার -
আছে তোমার সততা - তোমার বোধ -
তোমার স্বপ্ন, তোমার বিশ্লেষণ ও
উপস্থাপনা।
এসব কি একসাথে আঁকা যায় ?
এসবেই কি হবে ছবি ?
রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠি, নিজের মত কিছু কাজ দিয়ে শুরু করি
সেদিনের সকাল, বেছে নিই নিজের পছন্দের বা নিয়ম মাফিক কাজ।
পরিচিত হতে থাকি নানান অবস্থার
মাঝখান থেকে, কিছু রঙ, কিছু শব্দ,
কিছু আকার, থেকে যায় মনে,
সময় বেড়ে চলে - অপরিচিত
শব্দ-বিষ্ময়-বিশ্লেষণে -
রোজকার কাজে মন দিই, অভ্যাস মতো, পরিচিত সব, এর মাঝে হঠাৎ করে
কিছু ঘটে যাওয়া, তৈরি হবার উত্তেজনা বা বিষাদ - জাগে অনুভূতি।
তার মাঝে চলে আসে পরিবেশ -
রাজনীতি - সময় - আলোচনা ভাবাতে
থাকে, বিষয় পালটে যাওয়ার চরম অবস্থা।
সরাসরি বিষয়ে, না হয় রাজনীতি বা সময়ের উপস্থাপন বা একেবারে
বিপরীতমুখী হয়ে চরম শূন্যতা।
চলতে থাকলো নিজের রক্তের চাপ
বাড়িয়ে বুঝে নেওয়া। পারবে না সব
সইতে - সরে আসতে হতে পারে এমন
যুদ্ধের ঝনঝনানি থেকে।
আঁকতে পারো তোমার পাশের কমলাকে, আঁকতে পারো তোমার পাশের যা কিছু,
আঁকতে পারো আকাশ কুসুম আর আঁকতে
পারো এক পৃথিবী।
চারপাশে গণেশ পাইনের জীর্ণ
কঙ্কালসার অন্ধকার, বিকাশের
বাস্তবতা -
গণেশ হালুই বা প্রভাকর কোলতের
বিমূর্ত প্রকৃতি।
অপর্ণা কাউরের নারীবাদ, অর্পিতা সিং এর স্তরবিন্যাস,
যোগেনের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসা
বাঙালি নারী বা শূন্যে
দোদুল্যমান হলুদ মশারি অথবা মোটা
লাইনের সরল গতি।
কে.জি. সুব্রামানিয়ানের সহজ পট
বিশ্লেষণ বা মাধ্যমের ব্যবহার।
দালির চরম সারিয়ালিজম বা রুসো আর
শাগালের অবাস্তবতা।
এর মাঝে অজন্তা, ইলোরা, পট, যামিনী রায়, রামকিংকর, বিনোদবিহারী বা
রবীন্দ্রনাথ।
চরমভাবে সন্মুখীন হবে অনীশ কাপুর
আর সুবোধ গুপ্তার
ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেসন এর সামনে, বা নতুন টেকনোলজির শিবু নাটেশন।
উপেক্ষিত সমাজের ইউ মিন জুং অথবা
অতুল দোদিয়ার জলরং-এ।
কোথায় দাঁড়াবে তুমি ? গোদার, ফেলিনি, সত্যজিৎ, ভাষার
বিমূর্ততায়
জীবনানন্দ - শক্তি - সেও আছে
তোমার চারপাশে।
দেখবে না সরিয়ে রাখবে ? কথা বলবে না চুপ করে থাকবে ? মুখ খুললেই
ঝাঁপিয়ে পড়বে চারিদিক থেকে, মোকাবিলা করতে পার,
নিজের বিশ্বাস থাকলে।
হরেন দাসের মতো নীরবে কেটে যেতে
পারো লিনো আর উডকাটের
সরু সরু আঁচড়। শান্ত স্নিগ্ধ হতে
পারো বা উদ্দাম পিকাসো।
কাজে মাতাল হতে পারো ঋত্বিক, রামকিংকর বা গোপাল ঘোষের মত ।
অবশেষে দিনের শেষে তোমার সাদা
ক্যানভাস শূন্য রইল।
চোখ বুজে ভাবো কি রইল পড়ে , আঁকো তাই।
আঁকো তোমার যা মনে হয়, কোনো বাঁধা নেই, আঁকতেই হবে এমন কোনো
কথা নেই, চিৎকার করে পারো মুঙ্খ এর ক্রাই এর মতো।
কাঁকড় ছুঁড়তে পারো রামকিংকরের
মতো।
সব ঢেকে দিতে পারো হুসেনের মতো।
সব পারো
তুমি - শুরু তোমার মত করে পারো।
তুমি যেমন পারো -
তোমার বিশ্বাস থেকে যেমন পারো।
কোনো আদি নেই,
কোনো অন্ত নেই। একেক আঁচড় তোমার, একেকটা রঙ তোমার,
একটা শব্দ তোমার, বলা না বলা তোমার।
কেউ নেই চারপাশে, একা তুমি দাঁড়িয়ে আছো,
তোমার তুলি থেকে ঝড়বে তোমার গরম
রক্ত,
আঙ্গুলের ফাঁকে বেড়িয়ে আসবে মাটির
গতি,
হৃদয় দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবে
তাকে নতুন কিছুর আশায়।
দিলীপ মিত্র
শান্তিনিকেতন ০৮/০১/২০১৬
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment