শম্ভুদার চায়ের দোকানের পাশেই সুলভ শৌচালয়। তাতে শম্ভুদার চায়ের এশিয়
মিথবস্তুর কোনো তফাৎ হয় না। এখানেই আমি চৈনিক ও কানাডিয়ানদের বাংলা
ভাষার ক্লাস সেরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আকাশ গন্ধে বিভোর দেখেছি। একজন ভেজিটেরিয়ান এবং নন-ভেজিটেরিয়ানের সমানভাবে চায়ের বন্ধুযোগ কাজ করে। চায়ের প্রাপ্তিযোগ ছড়াতেই ভিয়েতনাম আর কিউবার অজস্র রসায়ন লক্ষ্য করি সোশ্যাল নেটওয়ার্কে। এসে পড়ে বাৎস্যায়ন থেকে ফ্রয়েড হয়ে সিমন দ্য বোভোয়ার । গ্লাস ঘুরিয়ে কেউ বলে শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্ত ও মলয় রায়চৌধুরীরা সকলেই আসলে প্যারাডাইস লস্টের চরিত্র। কেন বলে লোকেরা এতো বিতর্কিত কথা তা শম্ভুদা বিচার করতে চায় না। আমি লক্ষ্য করি, শম্ভুদার চায়ের ছাকনি থেকে গণতন্ত্রের নানারূপ বেরিয়ে আসছে। তাই নিয়ে শুরু হয়েছে কলরব। শম্ভুদার দোকানকে কেউ যদি পিকাসোর স্টুডিও বা ল্যুভর মিউজিয়াম ভাবে, আমি তার সঙ্গে পানের সম্মতি প্রকাশ করি। কলেজের পড়ুয়ারা যখন খুব বাজে পরীক্ষার পর বিমর্ষ বসে ফাঁকা গ্লাস হাতে, গ্লাস ভর্তি চা পিপাসুরা তাদেরকে নজরকাড়া ডাক্তারের পরামর্শ দেয়। কিন্তু কলেজ পড়ুয়ারা ভালো জানে শম্ভুদার চা আসলে কোনো পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নয়, তা একেবারে অন্যকিছু যার কোনো আপাত সংজ্ঞা হয় না।
রামুদার চায়ের দোকান ইউরোপে আর শম্ভুদার চায়ের দোকান এশিয়ায়। রামুদার
দোকানের পাশ দিয়ে মেষপালকেরা ব্যালাড গাইতে গাইতে গোলাপী মেঘের ভেতর
ঢুকে যায়। তাদের দেহ থেকে সবুজ চায়ের গন্ধ গোলাপী মেঘের পাড়ায় জানু পাতছে। এহেন চায়ের দোকানে নায়াগ্রা প্রপাতের ভারবাটিম থাকে। থাকে বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের অনুপম। রামুদা যে ছাকনি ব্যাবহার করেন, তাতে সমাধানের অযোগ্য কোনো ভাইরাস আত্মকথায় প্রবেশ করে না। মানুষেরা একে অপরের নিভৃতির ভেতর স্বেচ্ছাচারী অনুগমন করতে চায়। রামুদার লিকার চা তৎসৃষ্ট কান্নার ঘনত্ব কমাচ্ছে।স্বপ্নের প্লেনটি ক্রাশ হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে হৃদয়ের ওঙ্কার অঞ্চলে নেমে পড়ে। এক নিরাকার সুরের পাশে বেঞ্চিতে বসেছে সব শ্রেনির মানুষ। এই হল গে আমাদের
স্বশাসিত ক্যালরি এবং কেন্দ্রবিচ্যুত শরণাগত যা সকল বর্ণের ও গন্ধের বেদনা
শোনে। অনলাইনে গাইছে কে কৃষ্ণকোর্স, করছে রাধাপুজো। রামুদার চা খেয়ে
আমি হিমেনেথের দেশে চলে যাই, গাধার পিঠে উঠে বাঁশি বাজাই। সফটওয়ারি
মেয়েরা দাগাল্যান্ড ছেড়ে ইউরোপ চলে যেতে চায়। অথবা বাংলার সেই চাঁদমারি
গ্রাম, যেখানে রামুদার চা দোকানের মৌলিক উৎসগুলি একইরকম বেঁচে আছে।
লেটুদা কিন্তু ল্যাটা হাতের লোক নয়, সকলে তাকে লেটুদা বলেই চেনে। প্রজন্মের
পর প্রজন্ম সে এভাবেই পরিচিত। তার কোনো আনন্দ নেই, দুঃখও নেই, কেবল চেয়ে
থাকা আছে। প্রতিবাদ নেই, বিরক্তির প্রকাশ নেই, কেবল আগুনের স্বচ্ছতা টিকিয়ে
রাখার ইচ্ছা। কোথাও নথিভুক্ত হলেই কী, না হলেই কী, ধূসর ছায়া কেউ বদলাতে
পারবে না, তাহাদের বিশ্বাস। চায়ের দোকানে এতো মৎস্যজীবি কোথা থেকে আসে,
লেটুদা জানে না। জানতে ইচ্ছা করে, কিন্তু জানতে পারে না মৎস্যজীবিদের বিমূর্ত
ভাষার অদ্ভুত আচরণ দেখে। তারা চা খেতে খেতে লেটুদার পালস বিট শোনে আর
লেটুদাকে সুনামির উৎসের গল্প করে। গল্পের প্রক্রিয়ায় তাহারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছয়
যে, ছাকনি থেকে ঝরে পড়া চা সুনামিকেও শান্ত করে দিতে পারে। যখন বলি, চা পান সমাপ্ত হলে, আন্দুল থেকে আন্দুলেশিয়া যাবো, লেটুদা রবি ঠাকুরের দুটো চরণকমল
গেয়ে ওঠে, যেখানে লালমাটির অ্যালবাম উড়ছে। ব্যবসার বিপুল সম্ভাবনা সত্বেও দিনের অধিকাংশ ঘুমিয়ে কাটায় লেটুদা আর তার বউ সেফটিপিন দিয়ে কানের ধূসরতা মুছে ফেলে। ছবি ও কবিতার দেশে ধারাবাহিক সন্ত্রাসে সমগ্র বিশ্বমন বেদনায় কাতর হলে, ব্লগার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে চায়ের দোকানের আশেপাশে প্রতিবাদী পোস্টার সাঁটা হয়। উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ ,কোলরিজ, শেলী ও জন কিটস ভোরের কুয়াশা সরিয়ে এমনতর স্থানে বসে চা-পানের পরেই প্রথম পংক্তিটি যেভাবে লেখে, সেখানে সমস্ত আনন্দের উৎসে বহু দুঃখের কথা প্রবহমান।
উল্টোটাও ঘটিতে পারার সম্ভাবনায়, সমস্ত ঋতুর কাছে নতজানু
প্রার্থনায় বলি, সজনে ডাটার চচ্চড়ি রান্নার সময় আবহাওয়া যেন
রাজনৈতিক বিধিমতে প্রবাহিত না হয়। রান্নাটি যেন ফ্রেন্ডশিপে।
চিংড়িতে কন্ডিশনার ব্যবহারের দরকার নেই, সুগন্ধি হাত রেখো।
নৌকোটি ফনফন এগিয়ে গেলে পেঁয়াজরসুনগুলি সম্পূর্ণ সামাজিক
হবে। গাওয়া ঘি মেশানোর সময় বাসমতী চালের পাশে পূর্বাভাস।
১০৮ গার্ল ফ্রেন্ডের রশ্মিমতো কিচেনে সাজিয়ে রাখি নদীর ছলাৎ।
এসবের পর নিশ্চিত কোনো ঈশ্বরও বলবে না ভারবাহী ডায়াটমাত্র
প্রস্তুত করো। ব্যাগভর্তি বেলো রেখেছি বিপরীত মেরুগুলির জন্য।
তর্কের মেটামরফসিস হোলে কলাপাতার সঙ্গীতে ভাপিয়ে নিতে
কোনো অসুবিধা নেই। যাকিছু রান্না হোল তাতে বেলো বেজেছে
কিনা বলো। আমার সচিব বলতে উড়ন্ত হরিপাখি রেসিপিতে গান
লিখে ওভেনকে জাগিয়ে রেখেছে। পাত্রেপাত্রে বাজে আরশিনগর।
সুন্দরের সকল প্রজন্মকে রূপলাগি রাখার জন্য রোদে ছায়ায় রিহ্যাবে চারমাত্রায়
ছয়মাত্রায় আমাদের পুরনো নতুন সকল বর্ণের প্রতিবাদ
যেদিন আর কোনো প্রতিবাদ থাকবে না, আমরা পোকামাকড় হয়ে যাবো। তখন
সুপর্ণার ইচ্ছেমতো শীতকাল এলেও অবাক হওয়ার মতো
কোনো কেন্দ্র বা চিহ্ন পক্ষ বা বিপক্ষের জন্য খোলার প্রয়াস নিশ্চিত করা যাবে না।
তখন ভাটিয়াল গান আর কোনো হরিপদ শ্যামাপদর মর্ম
যন্ত্রণার মুক্তির হদিশ দিতে পারবে না। সূর্য কতোটা উঠবে, প্রথম স্লটের সঙ্গে শেষ
স্লটের কতোটা কুসুম কাহিনি কল্লোলে-কল্লোলে ভাসিয়ে
নিয়ে যাবে মুক্তক ছন্দে, তা বলে দেবে আমাদের প্রতিবাদ। নয়নজলে, ব্যথিতচিতে
আমাদের প্রতিবাদগুলি জাস্ট ক্লিক করলেই দেখা দেবে।
চাঁদ কতোটা পূর্ণিমা হবে তা নির্ভর করে খুনীদেরকে কিভাবে শান্ত করা গেছে তার
উপর। লুকিয়ে থাকার চেয়ে প্রকাশ্যে আগুনের ঝড় হয়ে
উঠতে চেয়েছি আমরা। আগুন ঝড়ে নির্মাণের রেখাগুলো স্পষ্টতর চোখে পড়বে।
পোকামাকড়ের জন্য কিছু উপহার কিছু সফটওয়্যার ও
জিঙ্গেল বেল থাকলেও, পোকামাকড় হয়ে ঘুরতে চাই না মোরা সাপখোপের দেশে।
বিরল রচনা ছাড়া আমাদের সমস্ত ভাঙ্গনের খেলাধুলা
জুয়াখেলা মাত্র। পুনরায় সৌন্দর্যের কথা বলতে আমৃত্যু অনশন করতে রাজী আছি।
0 comments:
Post a Comment